degreeexam2013.blogspot.com

Degree quotation

Friday, September 27, 2013

Degree Exam 2013 সমাজকর্ম ৪র্থ পত্রের কিছু কমন প্রশ্ন


Degreeexam2013.blogspot.com

১।সামাজিক গবেষণা বলতে কি বোঝ?সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর। 

ভূমিকা:-সমাজকর্মের সকল মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিতে সামাজিক গবেষণা অত্যাবশ্যক।সামাজিক গবেষনা ছাড়া সমাজকর্মমূলক কোনো কার্যক্রম গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাবলি ও সমাজকর্মমূলক কার্যাবলী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ ও সামাজিক সমস্যার সমাধান, সমাজকল্যাণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। সমাজকল্যানের লক্ষ্যে কার্যক্রম ও কর্মসূচি গ্রহনে সামাজিক গবেষণা দিক নির্দেশনা দান করে থাকে। সমাজকর্মে সামাজিক গবেষণঅল গুরুত্ব অপরিসীম।
 সামাজিক গবেষণার সংজ্ঞা:-সাধারনত সামাজিক গবেষণা বলতে সমাজ জীবনের সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান পদ্ধতিকে বুঝায়, যার উদ্দেশ্য হলো সামাজিক নীতি, পরিকল্পনা ও সমাজকল্যাণ কর্মসূচি প্রণয়ণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা।অন্যভাবে বলা যায়, সামাজিক গবেষণা হচ্ছে সামাজিক বিষয় সম্পর্কিত অনুসন্ধান যা্ সামাজিক কার্যক্রমে তত্ব এ তথ্য সরবরাহ করে সমাজকর্মকে সাফল্যমন্ডিত করে। 
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:- মুনীষী পি. ভি ইয়ং (P.V. Young) এর মতে, “ সমাজিক গবেষণা বলতে এমন এক প্রক্রিয়াকে বুঝায় যার দ্বারা যুক্তি ও প্রণালিবদ্ধ বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন আবিস্কার এবং পুরাতন তথ্যের সত্যতা যাচাই তাদের পর্যায়ক্রম , পারস্পারিক সম্পর্ক এবং যে প্রাকৃতিক নিয়মে এসব সংঘঠিত হয় তা বিশ্লেষন করা যায়।”
 Encyclopedia of Social Research অনুসারে, “সামাজিক গবেষণা সামাজিক প্রপঞ্চ নিয়ে কাজ করে। এটি মানুষের আচরণ, ও তাদের অনুভূত প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন আঙ্গিকে জানার চেষ্টা করে।” 
উপরিউক্ত সংজ্ঞা গুলোর আলোকে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণা হলো সমাজ সংক্রান্ত এমন এক ব্যাপক ভিত্তিক সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যার দ্ধারা সমাজবদ্ধ মানুষের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধিশালি এবং সামাজিক সমস্যাবলির সমাধান সম্ভব ও সহজ হয়। সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি/হাতিয়ার ও কৌশল সমূহ:- তথ্য সংগ্রহের উত্স এর প্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি /হাতিয়ার বা কৌশল ব্যবহার করা হয়।তথ্যের উত্স মূলত দুই প্রকার । যথা (ক)প্রত্যক্ষ উত্স (খ)পরোক্ষ উত্স।প্রত্যক্ষ উত্স থেকে প্রথমিক তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য যে সকল পদ্ধতি বা কৌশল অবলম্বন করা হয় সেগুলো হচ্ছে.....(১) পর্যবেক্ষণ (২) সাক্ষাত্কার (৩)প্রশ্নপত্র (৪) সিডিউল (৫) ব্যক্তিগত তদন্ত, (৬) প্রক্ষেপণ ইত্যাদি। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-
(১)পর্যবেক্ষণ:- সামাজিক গবেষণার পদ্ধতি হিসেবে পর্যবেক্ষণ বিষেশভাবে তাত্পর্যপূর্ণ।কেননা উত্তরদাতার অজান্তেই পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এজন্য সংগৃহীত তথ্য উত্তরদাতার পক্ষপাত থেকে অনেকটা মুক্ত থাকে। ইয়ং ভি. পালিনের মতে, “পরীক্ষিত ঘটনার সঙ্গে বিবেচনা সংবলিত সুপরিকল্পিত দর্শনই হচ্ছে পর্যবেক্ষণ।”এটি তথ্য সংগ্রহের এমন একটি কৌশল যাতে গবেষক গবেষণা পরিবেশের উপর কোনো নিয়ন্ত্রন আরোপ না করে বা কোনো দলের পরিবর্তন না করে পর্যবেক্ষণ করে এবং তথ্য সংগ্রহ করে।বর্তমানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্যামেরা ভিডিও ইত্যাদি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষন করা হয়।সামাজিক গবেষনার তথ্য সংগ্রহের জন্য সাধারণত নিম্নের তিন ধরনের পর্যবেক্সন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে:- 
(ক) তথ্য সংগ্রহকারী দ্বারা সরাসরি পর্যবেক্ষন : এ প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তার একটি তালিকা দেওয়া হয়। তিনি কার্যক্ষেত্রে গিয়ে সরাসরি প্রথম প্রপঞ্চ পর্যবেক্ষণ করে তা তালিকা বদ্ধ করেন।
(খ) সরাসরি পর্যবেক্ষণ: এ প্রণালিতে পর্যবেক্ষণকারী সরাসরি কার্যক্ষেত্রে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট সুচিন্তিত তথ্য সংগ্রহ করেন। ব্যাপক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষনের আলোচ্য প্রক্রিয়া ব্যবহার সম্ভব নয়। এতে বিশেষ করে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবণা থাকে না। 
(গ) পরোক্ষ মৌখিক পর্যবেক্ষণ : এ ধরনের পর্যবেক্ষনে তথ্য সংগ্রহকারী একটি প্রণীত প্রশ্নপত্র তৈরি করে সমস্যা সমন্ধে জ্ঞাত ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার গ্রহন করতে পারেন। পর্যবেক্ষণের পরোক্ষ প্রক্রিয়া তখনি ব্যবহার করা হয় 
(২) সাক্ষাত্কার : সামাজিক গবেষণায় সাক্ষাত্কার হচ্ছে তথ্য সংগ্রহের সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের লক্ষে যে উদ্দেশ্যমূলক কথোপকথোন হয় তাই সাক্ষাত্কার নামে অভিহিত। সাক্ষাত্কারের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে সাক্ষাত্কার গ্রহনকারী এবং সাক্ষাত্কার প্রদানকারীর মধ্যে মৌখিক কথাবার্তার মধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। সাক্ষাত্কার তথ্য সংগ্রহের একটি বচনিক পদ্ধতি।তথ্য সংগ্রহের কৌশল হিসেবেএ পদ্ধতির বিশেষত্ব হচ্ছে তথ্য সংগ্রহকারী অর্থাত্ প্রশ্নকর্তা উত্তরদাতার ভাব-ভঙ্গি, চালচলন , আবেগানুভূতি, উত্তেজনা, নীরবতা ইত্যাদি লক্ষ্য করে অপ্রকাশিত অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।এটি অনউন্নত,অজ্ঞ, অশিক্ষিত জনগনের নিকট থেকে প্রত্যক্ষ ও সরাসরি তথ্য সংগ্রহেরে প্রধান কৌশল। 
(৩) প্রশ্নপত্র : প্রশ্নপত্র সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের আর একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। গবেষণায় জনসংখ্যা অধিক হলে এবং তাদের অবস্থান কাছাকাছি না হলে তখন প্রশশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়এ্ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ অত্যন্ত ব্যায়ং সাপেক্ষ। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকযোগে এ প্রশ্নপত্র উত্তরদাতার নিকট প্রেরন করা হয় এবং উত্তরদাতা স্বাধীনভাবে তা পূরণ করে গবেষকের নিকট পাঠিয়ে দেয়। প্রশ্নপত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে উত্তরদাতা নিজেই এটি পূরন করেন।ফলে এক্ষেত্রে গবেষকের কোনো প্রতিনিধির উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রশ্নপত্র দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা:
 (ক) সংগঠিত প্রশ্নপত্রঃ- এতে প্রশ্নপত্রের সম্ভাব্য উত্তর গবেষক পূর্ব থেকে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। উত্তরদাতা সেগুলোর মধ্যে তার উত্তর সীমিত রাখেন। 
(খ) অসংঘঠিত প্রশ্নপত্রঃ- এতে প্রশ্নপত্রের কোনোরূপ সম্ভাব্য উত্তর গবেষক লিপিবদ্ধ করে রাখেন না। তাই উত্তরদাতা ইচ্ছামত উত্তর প্রদান করার সুযোগ লাভ করে।
 ৪) সিডিউল : সুনির্দিষ্ট ও পারস্পরিক পশ্নের সমন্বয়ে গঠিত প্রশ্নমালা যা তথ্য সংগ্রহকারী কর্তৃক সরাসরি তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সাক্ষাত্কার গ্রহনের ব্যবস্থা করা হয় তাকে সিডিউল বলা হয়।সিডিউলে প্রশ্নাবলি তথ্য সংগ্রকারী উত্তরদাতার মুখোমুখি হয়ে জিঞ্জাসা করেন এবং উত্তরদাতা প্রদত্ব উত্তর সিডিউলের নির্দিষ্ট স্থানে লিপিবদ্ধ করেন। এখানেই প্রশ্নপত্রের পদ্ধতির সাথে সিডিউলের পার্থক্য। এ পদ্ধতির সবচেয়ে সুবিধা এর মাধ্যমে অজ্ঞ, অশিক্ঁসিত লোকের নিকট হতে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা যায়। আর এ পদ্ধতির অনুবিধা হচ্ছে এতে গোপন তথ্যাদি সংগ্রহ করা যায় না। 
(৫) ব্যক্তিগত তদন্ত : কোনো ব্যক্তি, দল ও সমষ্ঠিকে একক ইউনিট হিসেবে গ্রহন করে উক্ত ইউনিটের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার কৌশলই হচ্ছে ব্যক্তিগত তদন্ত পদ্ধতি।ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে সুক্ষ্ম অনুসন্ধানের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তদন্ত পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য কোনো বিষয়ের সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে।
 (৬) প্রক্ষেপন : প্রক্ষেপন তথ্য সংগ্রহের এমন একটি কৌশল যাতে তথ্য প্রদানকারী বা উত্তরদাতার নিকট বিভিন্ন অবস্থা বা জিনিস উপস্থিত করে তার প্রতিক্রিযা থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়।এ পদ্ধতিতে যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছবি বা অন্য কোনোরূপ তথ্যদানকারীদের সম্মুখে হাজির করে তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে গবেষক সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেন। তথ্য প্রদানকারী তার অজান্তেই ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ, দৃষ্টভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত অনেক জটিল বিষয় সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়।তবে এ পদ্ধতিতে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।তাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ গবেষকদের মাধ্যমেই এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব।
 উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিকত গবেষনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক বা বিষয় হলো তথ্য সংগ্রজের তাতিয়ার বা কৌশল। গবেষণা কর্মে এসব কৌশল অনুসরণ না করে কিছুতেই সাফল্য আশা করা যায় না। কেননা গবেষণা কর্মে সাফল্য ব্যার্থতা অনেক ক্ষেত্রে এসব কৌশলের উপর নির্ভরশীল। তাই একজন সমাজ কর্মীকে তার গবেষণার কাজে তথ্য সংগ্রহের জন্য উল্লিখিত কৌশলসমূহ অনুসরণ করা প্রয়োজন।

2 comments: